Header Ads

Header ADS

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে যেভাবে নেট রান রেট হিসাব করা হয়

যেকোনো ক্রিকেট টুর্নামেন্টে দুই বা ততোধিক দলের পয়েন্ট সমান হয়ে গেলে পয়েন্ট টেবিলে যে গোলমালের সৃষ্টি হয় তার জট খুলতে চলে আসে নেট রান রেট। যেকোনো ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পয়েন্ট টেবিলের সর্বডানের কলামটি যার জন্য বরাদ্দ থাকে, সেই নেট রান রেট ‘সহজেই’ পয়েন্ট টেবিলে সমান পয়েন্টের দলগুলোর মাঝে অবস্থান বন্টন করে দেয়। তবে এই সহজ বিষয়টা বুঝতে আমাদের অনেকেরই বেশ বেগ পেতে হয়, কারণ প্রতি ম্যাচ শেষেই নেট রান রেট তার নিজের গতিতে বদলে যায়। পুরো পয়েন্ট টেবিলে যখন পূর্ণ সংখ্যার জয়জয়কার, তখন নেট রান রেট শুধু যে দশমিকের হিসাব নিয়ে আসে তাই না, সাথে থাকে প্লাস-মাইনাসের ঝামেলাও!
এই নেট রান রেটের ফাঁদে পড়ে বিশ্বকাপসহ বিভিন্ন ক্রিকেট টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়েছে অনেক দল। দেখতে নেট রান রেট যতটা জটিল, বুঝে ফেললে ততটাই সহজ। এই লেখা শেষ পর্যন্ত পড়ে ফেললে যেকোনো টুর্নামেন্টের যেকোনো পর্যায়ে আপনি একটা ছোট ক্যালকুলেটর নিয়েই হিসাব করে ফেলতে পারবেন যেকোনো দলের নেট রান রেট।
net-run-rate
সহজ ভাষায় নেট রান রেট ব্যাপারটি বাচ্চাদের যোগ-বিয়োগ আর ভাগের বিষয়। একটি দলের ব্যাটিং রান রেট থেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষ দলগুলোর ব্যাটিং রান রেট বিয়োগ দিলে যে বিয়োগফল পাওয়া যায়, সেটিই হচ্ছে নেট রান রেট। ২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের প্রথম ৫ ম্যাচের উদাহারণ দিয়ে বুঝে নেওয়া যাক নেট রান রেটের হিসাবটা। প্রথম পাঁচ ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের নেট রান রেট, -০.২৭০। চলুন, দেখে নিই কী করে বাংলাদেশের ব্যাটিং রান রেট আর প্রতিপক্ষ দলগুলোর রান রেট দিয়ে এই নেট রান রেট হলো।

# বাংলাদেশের ব্যাটিং রান রেট

কোন টুর্নামেন্টে একটি দল যত রান করেছে সেই রানের যোগফলকে টুর্নামেন্টে খেলা মোট ওভার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে পাওয়া যায় ব্যাটিং রান রেট। তবে কোন ইনিংসে যদি দলটি নির্ধারিত ওভারের আগেই অলআউট হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ঐ ইনিংস যত ওভারে হওয়ার কথা ছিল সেটিকেই ওভার সংখ্যা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

বাংলাদেশ এই পাঁচ ম্যাচে রান করেছে
দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৩৩০/৬;  ৫০ ওভার
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে   ২৪৪/১০;  ৪৯.২ ওভার
ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে         ২৮০/১০; ৪৮.৫ ওভারে
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৩২২/৩;    ৪১.৩ ওভারে

এই ৫ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং রান রেট হবে এমন,
(৩৩০+২৪৪+২৮০+৩২২)/(৫০+৫০+৫০+৪১৩/৬) = ৬.১৪১

নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছিল বলে পুরো ৫০ ওভারকেই ধরা হয়েছে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ অলআউট হয়নি দেখে ৪১ ওভার ৩ বলকে হিসাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রতি বলকে ১/৬ ধরে হিসাব করা হয়। ফলে অলআউট হয়ে যাওয়াকে শাস্তিস্বরূপ দেখতে পারি আমরা।  

# বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ দলগুলোর ব্যাটিং রান রেট

কোন টুর্নামেন্টে কোন দলের বিপক্ষে প্রতিপক্ষ দলগুলো যত রান করেছে তার যোগফল ও এই রান করতে দলগুলোর খেলা মোট ওভার সংখ্যার ভাগফল হচ্ছে প্রতিপক্ষ দলগুলোর ব্যাটিং রান রেট। এই হিসাবেও প্রতিপক্ষ দল কোন ম্যাচে অল আউট হয়ে গেলে নির্ধারিত ওভার সংখ্যা দিয়েই হিসাব করা হয় এই ব্যাটিং রান রেট।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ৫ ম্যাচে প্রতিপক্ষ দলগুলো রান করেছে,
দক্ষিণ আফ্রিকা  ৩০৯/৮; ৫০ ওভার
নিউজিল্যান্ড     ২৪৮/৮; ৪৭.১ ওভার
ইংল্যান্ড          ৩৮৬/৬, ৫০ ওভার
ওয়েস্ট ইন্ডিজ  ৩২১/৮; ৫০ ওভার

অর্থাৎ প্রতিপক্ষ দলগুলোর ব্যাটিং রান রেট
(৩০৯+২৪৮+৩৮৬+৩২১)/(৫০+৪১১/৬+৫০+৫০) = ৬.৪১১

নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারের আগেই ম্যাচ শেষ করে ফেলায়, তাদের বেলায় ৪৭ ওভার ১ বলকেই বিবেচনা করা হয়েছে।

# বাংলাদেশের নেট রান রেট

এবার আসা যাক নেট রান রেটের হিসেবে। বাংলাদেশের ব্যাটিং রান রেট এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে দলগুলোর ব্যাটিং রান রেট বিয়োগ করলেই বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশের নেট রান রেট।
অর্থাৎ বাংলাদেশের নেট রান রেট, ৬.১৪১ - ৬.৪১১ = -০.২৭০
তবে বারবার পাঁচ ম্যাচ বলছি, অথচ আরেকটি ম্যাচে হিসাব কোথায় ভেসে গেছে, তার কোন কথাই নেই! এখানে নেট রান রেটের দুটি ব্যাপার বলে রাখা ভালো।
এক, বাংলাদেশজ-শ্রীলংকা ম্যাচের মতো কোন ম্যাচ পরিত্যক্ত হলে সেই ম্যাচ নেট রান রেটে কোন প্রভাব ফেলবে না।
দুই, কোন ম্যাচ টাই হয়ে গেলে, সেটিও নেট রান রেটে কোন প্রভাব ফেলবে না।

*যখন বৃষ্টি হয়

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ নেট রান রেটের হিসাবে কিছুটা ঝামেলা পাকায়! বৃষ্টি হলে তখন ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতি এসে নেট রান রেটে প্রভাব বিস্তার করে।  
বৃষ্টিতে বাধাপ্রাপ্ত ম্যাচে ওভার এবং রান দুটোই কিছু কমে আসে। সেক্ষেত্রে বৃষ্টির পর যে রান ও ওভার বেঁধে দেওয়া হয়, সেটি দিয়েই নেট রান রেটের হিসাব করা হয়।
এই যেমন আফগানিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে আফগানিস্তান ৩৪ ওভার ১ বলে ১২৫ রান করে অলআউট হয়ে যায়। দুইবার বৃষ্টিতে বিঘ্ন হয়ে ম্যাচের দৈর্ঘ্য ৫০ থেকে কমিয়ে আনা হয় ৪৮ ওভারে। পাশাপাশি দক্ষিণ আফ্রিকার টার্গেট ১২৬ এর বদলে করা হয় ১২৭। অর্থাৎ আফগানিস্তানের রান এক্ষেত্রে হয় ১২৬।
দক্ষিণ আফ্রিকা জবাব দিতে নেমে ২৮ ওভার ৪ বলে এক উইকেট হারিয়ে ১৩১ রান করে ফেলে।
এই ম্যাচ থেকে আফগানিস্তানের রান রেট হিসাব করতে রানের বেলায় বিবেচনা করা হবে ১২৬ আর অল আউট হয়ে যাওয়ার কারণে ওভার হিসাব করা ৪৮-ই। আর দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ১৩১ রান এবং ২৮.৪ ওভারকে।

No comments

Theme images by piskunov. Powered by Blogger.