Header Ads

Header ADS

ইহুদি সম্প্রদায় : বর্তমান পৃথিবীর সুপারপাওয়ার (শেষ পর্ব)

ইহুদি সম্প্রদায় : বর্তমান পৃথিবীর সুপারপাওয়ার (শেষ পর্ব)



ইহুদিদের নিয়ে দুর্বল হোসেন বাতাসের জনপ্রিয় লেখা ইহুদি সম্প্রদায় : অত্যাচারিত থেকে অত্যাচারী : বর্তমান পৃথিবীর শাসক ও সুপারপাওয়ার থেকে সংকলিত । ইহুদিদের ইতিহাস জানুন, এদের থেকে সতর্ক থাকুন।

Image result for ইহুদি

৩য় পর্বের পর.........
হজরত ঈসা (আঃ) পর শত বছর কিংবা আরো অনেক বছর পার হয়ে যাবে - ততদিনে মানুষ আবার পূর্ণ গোমরাহীতে ফিরে যাবে। সে সময়টি দ্রুত ধাবিত হবে মহাঘটনার দিকে - কিয়ামত বা কারিয়া। ধ্বংস হয়ে যাবে এই সুন্দর পৃথিবী। ইতিহাস শেষ হবে এখানেই। সূরা কাহ্ফ এর ৯৪ নম্বর আয়াতে ফ্যাসাদ ও ইয়াজুজ মা’জুজ সম্পর্কে প্রস্তাব এসেছে- ‘ইয়াজুজ ও মা’জুজ পৃতিবীতে চূড়ান্ত পর্যায়ের ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে চলেছে’।একদল মুশরিক মদীনায় অবস্থানরত রাবাইদের কাছে মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে প্রশ্ন করে- তিনি আদৌ সত্য নবী হতে পারেন কি-না। উত্তরে রাবাইগণ ৩টি প্রশ্ন করার পরামর্শ দেয় যার উত্তর একমাত্র নবীগণ ব্যতীত অপর কোন মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। তার একটি প্রশ্ন ছিল - গুহায় অবস্থানকারীদের সম্পর্কে, অপরটি ছিল একজন মহান বিশ্বজয়ী শক্তিশালী ব্যক্তি সম্পর্কে যার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে ইয়াজুজ ও ম’জুজ এ সঙ্গে এবং অপর প্রশ্নটি ছিল প্রাণ বা রূহ সম্পর্কে। প্রাণ বা রূহ সম্পর্কে যে প্রশ্নটি করা হয়েছিল তা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাণ বিষয়ক তথ্য এবং তত্ত্ব। পৃথিবীর বিজ্ঞান এর চাইতে ভাল কোন উত্তর জানে না। গুহাবাসীগণের প্রশ্নটিতে মূল প্রতিপাদ্য বিষয়টি ছিল- সময় সংক্রান্ত। মহান দিগ্বীবিজয়ী সম্রাট যুলকারনাইন এর কারনাইন শব্দের অর্থ দু’টি শিং কিংবা দু’টি সময়কাল (epoch) ।সূরা কাহ্ফ-এ দু’টি প্রশ্নের জবাব এসেছে এবং দু’টি উত্তরেরই সংশ্লিষ্টতা রয়েছে একটি মৌলিক জিনিষের সঙ্গে - তা হলো সময়। যুলকারনাইনের ঐতিহাসিক সুস্পষ্টতা দূর্বোধ্য। যুলকারনাইনের কাহিনী অবতারণা করার পূর্বে হজরত মুসা (আঃ) জনৈক জ্ঞানী ব্যক্তিকে অনুসরণ করে চলছিলেন এবং পথিমধ্যে অনেক দুর্বোধ্য ঘটনার সৃষ্টি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি হজরত মুসা (আঃ)-কে যে ব্যাখ্যা দান করেছেন, তা হতে একটি সত্য বেরিয়ে আসে যা হলো- আপাতদৃষ্টিতে যা যুক্তিসংগত মনে হচ্ছে না এমন ঘটনার মূলে অনেক যুক্তির দৃঢতা থাকতে পারে। এই ঘটনাগুলোর পরপরই ১৮:৮৩ আয়াত হতে যুলকারনাইনের ঘটনার সূত্রপাত হয়। যুলকারনাইনকে যদি রূপক অর্থে ধরে নেয়া হয় (আমরা প্রকৃতপক্ষে এই দিগ্ববিজয়ী বাদশাহের সম্পর্কে ঐতিহাসিকভাবে কিছুই জানি না এই জন্য যে তার কোন তথ্য নেই) যুলকারনাইনের আমাদেরকে কালের একটি ‘মডেল’ প্রদান করে এবং এই মডেলে সমকাল বা বর্তমানকালকে সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা যায়। যুলকারনাইন ছিলেন শক্তির উদারহরণ, তাঁকে সকল উপকরণ দান করা হয়েছিল বলে কোরআন উল্লেখ করেছে। উপকরণসমূহ কী হতে পারে? তার উত্তর কোরআন দিয়েছে- “তাহাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায় উপকরণ দান করিয়াছিলাম” (১৮:৮৪)। কালের মডেলটির উপযোগিতাও এই উপায় উপকরণের অন্তর্ভূক্ত হতে পারে। উভয় কালের জন্য যুলকারনাইনের ঘটনার উপযোগিতা থাকতে পারে।
যুলকারনাইনের কালের মডেলটি ছিল ৩টি বিশেষ সময়কালকে নিয়ে। “ চলিতে চলিতে সে যখন সূর্যের অস্তগমন অঞ্চলে পৌঁছিল তখন সে সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাধারে অস্তগমন করিতে দেখিল এবং তথায় সে এক সম্প্রদায়কে দেখিতে পাইলেন। আমি বলিলাম, হে যুলকারনাইন! তুমি ইহাদিগওকে শাস্তি দিতে পার অথবা ইহাদিগের ব্যাপারে সদয় ভাব গ্রহণ করিতে পার (১৮:৮৬)। সে বলিল- যে কেউ সীমালংঘন করিবে আমি তাহাকে শাস্তি দিব, অতঃপর সে তাহার প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হইবে এবং তিনি তাহাকে কঠিন শাস্তি দিবেন (১৮:৮৭)। তবে যে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাহার জন্য প্রতিদান স্বরূপ আছে কল্যাণ এবং তাহার প্রতি ব্যবহারে আমি নম্র কথা বলিব (১৮:৮৮)। সূর্য সত্যের প্রতীক এবং জল স্বচ্ছতার প্রতীক। সাধারণত সূর্যকে যে জলাশয়ে ডুবতে দেখা যায়- সে হলো সমুদ্র। সমুদ্রের জল স্বচ্ছতার প্রতীক। সূর্যাস্তের সাধারণ দৃশ্যটি হলো সামনে স্বচ্ছ জলাধার এবং তাতে সূর্যের অস্তগমন। কোরআনে চিত্রায়িত যুলকারনাইনের অস্তগমন স্থানে পৌঁছা যদি কালের শেষে সময়ের চিত্র হয়, তবে ব্যক্ত তথ্যটি হলো যে - শেষকালে সত্য পঙ্কিল অস্বচ্ছতায় নিমজ্জিত হবে। সে সময়ের পৃথিবীবাসীগণের আদর্শিক অবস্থান হবে এমন যে তারা সীমালংঘনের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে, ফলত তারা যুলকারনাইন কর্তৃক ইহকালে শাস্তি প্রাপ্ত হবে এবং যুলকারনাইনের প্রতিপালক তাদেরকে পরকালে শাস্তি প্রদান করবেন। শুধুমাত্র বিনয় নম্র ব্যবহারের উপযুক্ত হবে তারা যার সৎকর্মপরায়ণ (ইসলামী আদর্শে প্রতিষ্ঠিত)। আমরা এমন একটি সম্ভাবনা দ্রুত এগিয়ে আসতে দেখছি। সামনে আসন্ন হজরত ঈসা (আঃ)-এর প্রত্যাবর্তন। তিনি সীমালংঘনকারীদের পৃথিবীতে শাস্তি দিবেন তাঁর প্রত্যাবর্তনের পর; এ শাস্তি পৃথিবীতেই সংঘটিত ঐশ্বরিক শাস্তি। অগ্নি, ভূমিধস, ক্ষুধা, মহামারী, ধোঁয়া ইত্যাদি সকল প্রকারের শাস্তি পৃথিবীতে তাদের জন্য যারা ইসলামকে লাঞ্ছিত করেছে। আর শেষ যুগে যারা ঈমানকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে তাদের জন্য রয়েছে প্রতিশ্রুত মহা সুখ সংবাদ। হজরত ঈসা (আঃ) এসে এমন একটি শক্তিশালী সংঘের সাথে যুদ্ধ করবেন সমস্ত পৃথিবী যাদের কাছে হবে পদানত। এই পৃথিবীতে তাদের মুখোমুখি হবার শক্তি কারো থাকবে না। ইহুদি ও খৃষ্টান অধ্যুষিত এই কুফ্‌ফার বাহিনীর জন্য রয়েছে পৃথিবীতে ভয়ানক শাস্তি (যা হজরত ঈসা (আঃ) এর পক্ষ হতে) এবং পরকালে তারা ইসলাম নির্মূল অভিযানে আত্মনিয়োগের জন্য পাবে প্রতিপালকের শাস্তি। আমরা জানি না যুলকারনাইনের চরিত্রটি শেষযুগে হজরত ঈসা (আঃ) এর রূপায়ন কি-না।
যুলকারনাইনের অপর যাত্রাটি পূর্বদিকে। যেহেতু সূর্যোদয়কালের সৃষ্টি ও সূর্যাস্তকালের শেষ এই রূপক উপমায় ব্যবহৃত হতে পারে সেহেতু সূর্যোদয় স্থলে কালের শুরুর চরিত্রটি আমরা ১৮:৯০ আয়াতে দেখতে পাই- “চলিতে চলিতে যখন সে সূর্যোদয় স্থলে পৌঁছিল, তখন সে দেখিল উহা এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হইতেছে যাহাদিগের জন্য সূর্যতাপ হইতে কোন অন্তরাল আমি সৃষ্টি করি নাই” (১৮:৯০)। কালের শেষ অংশের বিপরীতে কালের শুরুর অংশটির বৈশিষ্ট্য কি, তা এ আয়াত ব্যাখ্যা করে। কালের শুরুর অংশে সমুদয় মানবমন্ডলী সত্যের সঙ্গে (সূর্য) এর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নিয়ে বিদ্যমান ছিল-এই সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারি। এই আয়াতের বৈশিষ্ট্য হলো যে যুলকারনাইনের এখানে কোন প্রত্যক্ষ ভুমিকা নেই- তিনি সুর্যোদয় অঞ্চলের জন্য একজন আগন্তুক বা দর্শক মাত্র- কোন প্রকার ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা নেই।
যুলকারনাইনের তৃতীয় যাত্রাটি একটি চিন্তাউদ্রেককারী ঘটনা। “চলিতে চলিতে সে যখন দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছিল, তথায় সে এক সম্প্রদায়কে পাইল যাহারা তাহার কথা একেবারেই বুঝিতে পারিতেছিল না” (১৮:৯৩) । উদয় অস্তাচলের বর্ণনার প্রেক্ষেতি কোথাও ভূমি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়নি। দুই পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থান দুই যুগের দুইটি সীমারেখা দ্বারা নির্ণীত! এই মধ্যবর্তী স্থানে একটি ঘটনা ঘটছে যা হলো- ইয়াজুজ ও মা’জুজ নামক দু’টি সম্প্রদায় ফ্যাসাদের জন্ম দিচ্ছে (১৮:৯৪)। তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত একটি পদ্ধতি বা টেকনোলজি যা লোহা-তামা গলানোর আনুপাতিক (১৮:৯৬) সে সময় শ্রম একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে - এ বিষয়ে আমরা সুস্পষ্ট ধারণা পাই। আমরা যদি সহজ ও সাধারণ দৃষ্টি প্রসারিত করি তবে সময়ের এ পর্যায়কে সম্ভবত ‘শিল্পের প্রকাশ প্রসার বিন্দু” বলে চিহ্নিত করতে পারি। অন্যভাবে বলা যায়- মানুষ যখন সংঘবদ্ধ শ্রমকে ইতিহাসে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করতে শিখেছে, সে সময়টিই হলো ইয়াজুজ ও মা’জুজ এর ফ্যাসাদ সৃষ্টিকাল, যার বিশ্বজোড়া তাৎপর্য থাকবে। চূড়ান্ততার সময়টি শিল্প বিপ্লব বিন্দু হিসেবেও হয়তো ভাবা যেতে পারে।
অন্যদিকে দুই পাহাড়ের প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থানিক মান পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব ও প্রভাবের দুঢতার সমানুপাতিক করা যায়। আর শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণ দ্বারা প্রতিরক্ষার বিষয়টি তাদের সাথে সম্পর্কের বিচ্ছিন্নতার আনুপাতিক হতে পারে। যেখানে বাঁধটি হতে পারে কোরআন হাদীছের শক্তিশালী আইন ও নৈতিকতার দেয়ালের সমানুপাতিক। এটি হতে পারে সর্বকালীন দৃষ্টিভঙ্গি।
আমরা ‘ফ্যাসাদ’-এর কোরআন হতে ব্যাখ্যা নিতে চাই। সাধারণভাবে ফ্যাসাদের অর্থ হলো Corruption, False report, Mischief ইত্যাদি। কোরআন তার ভাব বলয়ে ফ্যাসাদের ব্যাখ্যা ভিন্নরূপে দেয় যার অর্থ দাঁড়ায় - যে কাজ শুধু আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণই করে না, কার্যত যা আল্লাহর অস্তিত্বকে মুছে দেবার লক্ষ্যে এগিয়ে যায় তার নাম ফ্যাসাদ। ফিরাউন যখন হজরত মুসাকে (আঃ) সমূলে ধ্বংস করার জন্য নীলনদে তৈরী হওয়া অলৌকিক রাস্তায় পিছু নিয়েছিলো, ঠিক তখনই দু’দিক হতে বিপুল পানি এসে ফিরাউন ও তার দলবলকে গ্রাস করে। ঐ সময় তার চোখের সম্মুখে সত্য উদ্ভাসিত হয়। সে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করার পূর্বে বাস্তবতা উপলব্ধি করে যে- “আমি বিশ্বাস করিলাম বনি ইসরাঈল যাঁহাতে বিশ্বাস করে। তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নাই এবং আমি আত্মসমর্পনকারী মুসলমানের অন্তর্ভূক্ত হইলাম। (১০:৯০)। এর প্রত্যুত্তরে আল্লাহপাক কোরআনে জগৎবাসীকে ফ্যাসাদের সংজ্ঞা জানিয়ে দেন। “ইতোপূর্বে তুমি ছিলে সীমালংঘনকারী এবং ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারীদের অন্তর্ভূক্ত” (১০:৯১)। ইতোপূর্বে ফেরাউন যে কাজ করেছিলো তা ছিল - আল্লাহর অস্তিত্বের প্রচারকারীকে সমূলে বিলুপ্ত করার জন্য নিজের সর্বময় শক্তি প্রয়োগ ও নিজে সশরীরে অংশগ্রগণ এবং তার মাত্রাটি ছিল এমন পর্যাযের যে মৃত্যু ঝুঁকি ভুলে গিয়েও যাবতীয় শক্তি দিয়ে আল্লাহর অস্তিত্বের দাবিকে পৃথিবী হতে মুছে ফেলার আগ্রহ ও বাস্তবিক অংশগ্রহণ। তাই হলো ফ্যাসাদ। “নিশ্চয় ইয়াজুজ ও মা’জুজ দেশে (বা পৃথিবীতে) ফ্যাসাদ সৃষ্টি করিতেছে।” (১৮:৯৪)। এর অপর অর্থ হতে পারে- ইয়াজুজ ও মা’জুজ পৃথিবীতে আল্লাহর অস্তিত্বকে বিলুপ্ত করে দেবার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের যাবতীয় কাজই হলো ফ্যাসাদ। ফলত ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী ইয়াজুজ-মা’জুজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে আর দুটি ঘটনার; একটি হলো সংঘটিত শ্রমের বিবেচনা ও অন্যটি হলো ধাতু শিল্পের বৈপ্লবিক ব্যবহার। এ ক্ষেত্রে বোঝার সুবিধার জন্য যদি আমরা শিল্প বিপ্লবকে সেই ক্ষণকাল হিসেবে স্থির করি তবে বিস্ময়করভাবে দেখতে পাই যে একটি “খেজা সম্প্রদায়” ককেসাস পার্বত্য অঞ্চলে শিল্প বিপ্লবের কিছুকাল পূর্বে সহসা ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করে। একই অঞ্চল হতে এবং একই গোত্র হতে আর একটি দল খৃষ্টান হয়ে যায়। এরপর এই দুই গোত্রের লোকজন তদানীন্তন ইউরোপের প্রায় সর্বত্র ধর্মীয় প্রেষণায় ছড়িয়ে পড়ে এবং সর্বশেষে শিল্প বিপ্লব বলতে যা বোঝায় তা উক্ত খেজা সম্পদায়ের ইহুদী দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়। ইহুদীদের নিকটবর্তী অপর দলটি ছিল এই ‘খেজা’ সম্প্রদায় হতে উৎসারিত খৃষ্টান। শিল্পের প্রভাব ও মালিকানায় সেই খেজা সম্প্রদায়ের ইহুদী প্রাধান্য (Dominance) সেই শুরুর কাল হতে বিদ্যমান ছিলো। এবং সে হতেই ইহুদী জাতি শিল্প ও বাণিজ্যে শীর্ষস্থান অধিকার করে নেয়। ধন্যবাদ ডঃ ইমরান নূর হোসেন - প্রাপ্তিটির জন্য।
এই খেজা বংশোদ্ভূত ককেশিয় ইহুদি এবং খৃষ্টানরা বনি ইসরাঈলের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত?তারা কেউই আদি ইহুদি / খৃষ্টান নয় যাদের মূল ছিল বনি ইসরাঈল সম্প্রদায়ে। তারা বনি ইসরাঈলের সাথে কোনভাবেই সম্পর্কিত নয়। কিন্তু পরিণামে ইতিহাসে তারা বনি ইসরাঈলের ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বনি ইসরাঈলরা কেউই পৃথিবীতে সম্পদের পাহাড় সৃষ্টি করেনি। সম্পদ ও বাণিজ্যের অসীম ক্ষমতা ধরা দিয়েছে শিল্প বিপ্লবে যাদের নের্তৃত্বে সেই খেজা সম্প্রদায়ভূক্ত ইহুদি ও খৃষ্টানদের হাতে। ইহুদী ও খৃষ্টানে ধর্মান্তরিত একটি গোত্র পরিণামে দু’টি পৃথক গোত্রে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গিয়েও কার্যত সেই বনি ইসরাঈলদের পৃথিবীতে ইসরাঈল সাম্রাজ্য গড়ে দেয়ার বিষয়ে শুধু সহযোগিতাই করছে না- তারা পবিত্রভূমি বাইতুল মুকাদ্দাসে অবস্থিত ইসলামের গৌরব ও দ্বিতীয় কিবলা মসজিদুল আকসাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে তার ধ্বংস সাধনের দৃঢ় প্রত্যয় প্রমাণ করেছে একদিকে; অন্যদিকে বনি ইসরাঈল, যাদেরকে আল্লাহপাক পবিত্রভূমি হতে বহিষ্কৃত ঘোষণা করেছেন, তাদেরকে সেই ভূমিতে নকল তৌরাতের (Old Testament) কুফরী নির্দেশ প্রতিষ্ঠা দেয়ার সকল আয়োজন প্রায় সম্পন্ন করে ফেলেছে সফলভাবে। তাদের এই কাজটি খোদায়ী আইনের বিলুপ্তি ঘটানোর সহস্র চিহ্ণের একটি। অতএব আমরা সিদ্ধান্ত পেতে পারি যে শিল্প বিপ্লবের প্রধান দুটি ধারা খেজায়ী ইহুদী ও খেজায়ী খৃষ্টান সম্ভবত ইয়াজুজ মা’জুজের ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ করেছে। বলাবাহুল্য তারাই কার্যত ইউরোপ এবং বিশেষভাবে যুক্তরাজ্য ও আমেরিকার অর্থনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে শীর্ষে বিখ্যাত জায়নবাদী ইহুদী ও জায়নবাদী খৃষ্টান হিসেবে চিহ্ণিত।
ডঃ ইমরান নযর হোসেনের (Imran Nazar Hosein) সাড়াজাগানো গবেষণা হতে জানা যায় যে ‘ক্বারিয়াত” বিষয়ক হাদীছের প্রতি যদি দৃষ্টিপাত করা হয়, তবে শেষকাল, ইয়াজুজ-মা’জুজ ইত্যাদির সাথে সংশ্লিষ্ট মোট ৫৮টি হাদীছের বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য বিখ্যাত হাদীছ গ্রন্থে চিহ্ণিত করা যায়। সমস্ত হাদীছ সমূহেই ক্বারিয়াত দ্বারা নির্দেশ করা হয়েছে জেরুজালেম শহরকে। কিন্তু কোরআন ক্বারিয়াতকে নির্দেশ করেছেন বৈশিষ্ট্যের দ্বারা- “ওয়ামালাকুম লা-তুক্বাতিলুনা ফী সাবিলিল্লাহি ওয়াল মুসতাদ’আফিনা মীনার রিজালী ওন্নেসায়ি ওয়াল বিলদানীল্লাযিনা ইয়াক্বেলনা রাব্বানা মীন হাযিহিল ক্বারইয়াতিয যালিমী আহ্‌লুহা" (৪:৭৫) অর্থাৎ যেখানে জেহাদ তোমাদের পৃথিবী জীবনের পরিচিতির অংশ, সেখানে তোমাদের কি হয়েছে যে তোমরা সে অভিযানে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে না যখন একটি ক্বারিয়াত হতে বুকফাটা চিৎকার দিয়ে প্রার্থনা করছে একদল পুরুষ, নারী ও মানুষের শিশু আর বলছে হে আমাদের প্রভু আমাদেরকে এই যালিম-অত্যাচারের ক্বারিয়াত হতে মুক্ত করে দাও।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন উদাহরণ কেবল একটি। একটি ক্বারিয়াত বা শহরের নাম সমস্ত পৃথিবীর মানুষ জানে যেখান এত দীর্ঘসূত্রী তীব্র অত্যাচার ইতিহাসের কোনকালে ইতোপূর্বে ঘটেনি। সেখান পুরুষ ও যুবকরা শক্তিময় হয়েও নিরুপায়, নারীরা তীব্রতম অত্যাচারের ও পাশবিকতার শিকার আর অকাতরে ছেলেমেয়েদের জীবন ধূলির মূল্যে উড়ে যাচ্ছে। এই শহরের অত্যাচারের একদিকে তুলনা নেই ইতিহাসে; অন্য দিকে এই অত্যাচার ও চোখ ধাঁধানো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নেই কোন বিচারের সম্ভাবনা কিংবা বিশ্ব বিবেকে প্রতিবাদ। এই ক্বারিয়াতকে আমরা চিহ্ণিত করতে পারি -যে জেরুজালেম তথা প্যালেষ্টাইন। বনি ইসরাঈল সারা পৃথিবীতে বিক্ষিপ্ত হয়ে ২ হাজার বছর অভিশপ্ত জীবন কাটিয়েছে। জাতি হিসেবে তারা শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার ছিল এক সময়। সেই শ্রেষ্ঠত্ব ও উন্নত অবস্থান হতে বনি ইসরাঈল পরিচয়হীন জীবন কাটিয়েছে এবং পৃথিবীতে অত্যাচার ও অবিচারের শিকার হয়েছে। তারপর অবলীলাক্রমে তারা জেরুজালেমকেন্দ্রীক জাতিগত সত্তা সৃষ্টি করেছে এবং তার প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনসাধারণ ও অধিবাসীগণকে (মুসলমান) তারা ইতিহাসের সবচাইতে জগন্যতম পদ্ধতিতে নিপীড়ন করে চলেছে। ইতিহাসের সবচাইতে বড় চিহ্ণিত নিপীড়ন হিটলার ইহুদীদের ওপর করেছিলো তাদের জার্মান জাতিসত্তার প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার কারণে। তারা জার্মানিতে বসে জার্মানি হতেই ষড়যন্ত্র করেছিলো ইংরেজদের পক্ষে এবং জার্মানির বিপক্ষে। হিটলার তাদেরকে বর্বরতম পদ্ধতিতে হত্যা করে। এই নাৎসী বর্বরতা হতে সম্যক অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা লাভ করা হলেও এই ইহুদি জাতি সেই ক্বারিয়াত বা শহর অর্থাৎ জেরুজালেমে একত্রিত হবার সুঝোগ পায়- তখন তারা নাৎসী অত্যাচারকে হার মানায় এমনি পদ্ধতিতে তারা প্যালেষ্টাইনে অত্যাচার আরম্ভ করে। এই অত্যাচার পৃথিবীর অন্যান্য স্থানকালের অত্যাচার হতে বৈশিষ্ট্যে আলাদা। ইসরাঈলের বিরুদ্ধে ন্যায়-অন্যায় বোধ নেই, থাকতে নেই কিংবা প্রয়োজন নেই- পৃথিবীর সমস্ত বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের কাছে এ যেন এক গ্রহণযোগ্য বিষয়। ইতিহাসে ইতোপূর্বে এই প্রকৃতির অত্যাচার কখনো মানবজাতি প্রত্যক্ষ করনি। অত্যাচারের গতিমাত্রা ও অনন্যতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করার জন্যই এই অত্যাচারের প্রকৃতি দ্বারা কোরআন এই ক্বারিয়াত বা জনপদকে চিহ্ণিত করেছে- তা সন্দেহাতীতভাবে প্যালেষ্টাইন। কোরআন এই জেরুজালেমকেন্দ্রীক প্যালেস্টাইকেই আবার শেষকালে ইয়াজুজ-মা’জুজের সনাক্তকরণ মানদন্ড হিসেবে জগদ্বাসীর কাছে পরিচয় করে দিয়েছে।
বলা দরকার যে ইয়াজুজ-মা’জুজ সম্পর্কে ইবনে খালদুন হতে প্রাপ্ত শিক্ষায় জ্ঞানী সম্প্রদায়ের সুবিশাল অংশ একে একটি হজরত ইসা (আঃ) পরবর্তী ঘটনা মনে করেন। মূলত এমন কতিপয় হাদীছ আছে যে, সব হাদীছসমূহকে ভুল বোঝা হয়েছে এই কারণে যে এখন থেকে মাত্র ১০ কিংবা ৫ বছর পূর্বেও ঐসব হাদীছের আবেদন সুষ্পষ্ট ছিল না। কারণ হিসেবে ঘটনার সাদৃশ্যহীনতা এবং আকস্মিক বৈচিত্র্য এবং যুক্তিযুক্ততা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্তের অভাব। বর্তমানে বিবিধ ঘটনাসমূহ ঘটার কারণেই কেবল ঐ হাদীছগুলোর নিখুঁত সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়েছে। হাদীছ সমূহ মূলত দাজ্জাল, ইয়াজুজ-মা’জুজ ও শেষকালে খৃষ্টান-ইহুদি আক্রমন ও মুসলমানদের নির্ঘাত পরাজয় সক্রান্ত।
কিন্তু কোরআন যে পদ্ধতি অবলম্বন করে তাতে কোনপ্রকার সহায়ক ছাড়াই সময়ের চরিত্র এবং শেষকালের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পরিষ্কার জ্ঞান পাওয়া সম্ভব এবং এ যুগে মুসলমানের কী কর্তব্য সে বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়। এ যুগে শেষকালের বিষয়ে নিশ্চিত জ্ঞান হওয়া একটি অতীব জরুরী বিষয় এই জন্য যে তা কর্তব্য ও কর্মপদ্ধতিকে নির্বাচন করতে সাহায্য করে।
ইতোপূর্বে আমরা ফিইফা সম্পর্কে অবগত হয়েছি যে আল্লাহপাক বনি ইসরাঈলের বংশধরদের শেষ শাস্তির জন্য অভিশপ্ত ভূমি ফি-ই-ফা তে সকলকে একত্রিত করবেন। যখন বনি ইসরাঈল ফি-ইফাতে একত্রিত হয়ে যাবে- পৃথিবীতে আর কখনো ‘আরদুল মুকাদ্দাস’ অবশিষ্ট থাকবে না। কারণ পূর্বে যাকে আরদুল মুকাদ্দাস হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিলো ভালো সম্প্রদায়ের জন্য, তাকে এখন দুষ্ট প্রকৃতির বনি ইসরাঈলের জন্য ফিইফা-তে রূপান্তরিত করা হয়েছে। সুতরাং বনি ইসরাঈলের একত্রিত হওয়ার ঘটনাটি দুটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যার একটি হলো- তাদের একত্রিত হওয়ার দৃশ্যটি তাদেরই ধ্বংস হবার একটি বলিষ্ট প্রত্যয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর তারা প্যালেষ্টাইনে একত্রিত হয়েছে এবং এই ভূমিতে এক বিশেষ পদ্ধতিতে অত্যাচারের গিরিমালা তৈরি করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে যার দ্বিতীয় নজির নেই। বৈশিষ্ট্যে ও উপাদানে এই অত্যাচার প্রক্রিয়াটি এমন যে তাদের অনন্য অমানবিক অত্যাচারের চক্রটিক ধারণ করে রেখেছে একটি শক্তি যা পৃথিবীর মানবতা, কল্যাণ, শান্তি ও ন্যায় বিচারের শিক্ষা দেয় এবং সমস্ত বিশ্বের পুলিশ হিসেবে কাজ করে। অন্যান্য জাতি কোন অন্যায় কিংবা সীমালংঘন করলে তাৎক্ষণিকভাবে শক্তি প্রয়োগ দ্বারা সে দেশটি তথাকথিত শান্তি ও ভারসাম্য রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু সে জাতিটি বনি ইসরাঈল তথা ইসরাঈল রাষ্ট্রের সীমালংঘনকে নির্লজ্জভাবে সাহায্য করে। ইরাককে আক্রমন করার সর্ববৃহৎ কারণসমূহের একটি ছিলো ১৪টি ইউএন রেজুলেশন ভঙ্গ করা। একই সময় ইসরাঈল ৯৬টি ইউএন রেজুলেশন অমান্য করেছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে পৃথিবীর একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি। ফিইফা-তে আগত ও জমায়েত হওয়া জাতিটি সমস্ত আরব ইতিহাসের সবচাইতে জগন্য পদ্ধতির হত্যা, পাশবিক অত্যাচার, লুন্ঠন, জবরদখল, আবাসিক অঞ্চলসমূহ জীবন্ত মানুষ সমবেত ডেমোলিশন ইত্যাদি জাতীয় অন্যায় করেও সামান্য সমালোচনার সামনে আসছে না। এই নিশ্চিত নিরাপত্তা ও হত্যা এবং ধ্বংসের লাইসেন্স যদিও আপাত দৃষ্টিতে একটি নিরাপদ পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তথাপিও সৃষ্টির নিয়ম অনুযায়ী আর একটি নিশ্চিত সমাপ্তি রয়েছে এবং তার নিশ্চিত প্রতিফলনও রয়েছে। যেহেতু অত্যাচারের মাত্রাটি অতিশয় বর্বর, সেহেতু তাদের ভাগ্যও আশা করা যায় একটি পরিণতি যা হবে অতি নির্মম এবং ইতিহাসে উপমা হবার যোগ্য। আমরা বনি ইসরাঈলের একত্রিত হবার দৃশ্য দেখেছি, অস্বাভাবিক অত্যাচারের ঘটনাটি দেখছি এবং এই অস্বাভাবিকতা হতেই প্রতিক্রিয়াটি এখন কিংবা পরবর্তীতে আশা করা যায় তাদের জন্য অকল্যাণের আকাশ উন্মূক্ত করে ধরবে।
দ্বিতীয় তথ্যটি হলো একটি সমীকরণের মত। এই সমীকরণটি সময়কে বুঝতে সাহায্য করে, চিহ্ণিত করে দুটি জাতি সত্তাকে যারা এই পৃথিবীতে ফ্যাসাদ আবাদ করে বেড়ায়। এই সমীকরণটি চিহ্ণিত করে প্রকৃতই ইয়াজুজ-মা’জুজ নামক জাতি দুটিকে - “হারামুন ‘আলা ক্বারইয়াতিন আহলাক্বনাহা আন্নাহুম লা ইয়ারজিয়ো’ন (২১:৯৫) হাত্তা ইয়া ফুতিহাত ইয়াজুজ ওয়া মা’জুজ ওয়াহুম মীন কুল্লি হাদাবিন ইয়ানসিলূন” (২১:৯৬) অর্থাৎ ঐ ক্বারিয়াত (যার কেন্দ্রীয় ভূমি জেরুজালেম) হারাম করা হয়েছে তাদের জন্য যারা এখানে বসবাস করতো, আর তারা সেথায় প্রত্যাবর্তন করার সুযোগ পাবে না (২১:৯৫); ততদিন পর্যন্ত যতদিন না ইয়াজুজ-মা’জুজ নামক দুটি সম্প্রদায় তাদেরকে ঐ ক্বারিয়াতে আবার পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করবে; আর ইয়াজুজ-মা’জুজ এই সম্প্রদায়সমূহ পৃথিবীর সকল শীর্ষ অবস্থানে অধিষ্ঠিত রয়েছে যার কারণেই স্রষ্টার নিয়মের লংঘন ঘটিয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে কেনান বা প্যালেষ্টাইনে প্রতিষ্ঠা দেবে তারা।
এই আয়াত সমূহের সমীকরণ সৃষ্টি করা হলে তা এই দাঁড়ায় জেরুজালেমই একমাত্র শহর যার অধিবাসীগণকে আল্লাহপাক ধ্বংস করেছেন এবং দুই বার তাদেরকে ঐ পূণ্যভূমি হতে বহিষ্কার করেছেন যার দ্বিতীয় নজির ইতিহাসে নেই। খৃষ্টপূর্ব ৫৮৭ বেবিলনীয়ান সেনাবাহিনী বুখতে নসর (Nebuchadnezzar) ইহুদীদের পদানত করে, তাদের মসজিদ ধ্বংস করে (এই মসজিদুল আকসা তাদেরও মসজিদ ছিল, সিনাগগ নয়) ও জেরুজালেম বিধ্বস্ত করে ইহুদীদের দাসে পরিণত করে। পারশিয়ানরা পরে বিজেতা হিসেবে আসে এবং তাদেরকে পুনর্গঠনে সাহায্য করে। খৃষ্টপূর্ব ৭০ অব্দে আবার তারা রোমান সেনাবাহিনী হাতে বিপর্যস্ত হয় (Titus); তারা ইহুদীদের আবার দাসে পরিণত করে কতিপয়কে এবং বিতাড়িত করে অন্যদের, তাদের উপাসনালয় ভেঙ্গে দেয় এবং সারা দুনিয়ায় তারা ছড়িয়ে পড়তে বাধ্য হয়। পৃথিবীর ২০০০ বছরের পূর্ব ইতিহাসে একমাত্র ইহুদী জাতির ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে যে তারা তাদের মাতৃভূমি হতে বিতাড়িত হবার পর সেখানে আর প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়নি। জেরুজালেম নগর যেন তাদেরকে বহিষ্কার করেছে এবং দ্বার রুদ্ধ করে দিয়েছে। আমরা এখন দেখছি সেই বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়া ইহুদীরা আবার সমবেত হয়েছে একটি অখন্ড রাষ্ট্রীয় সত্তার একটি ভূমি খণ্ডে (প্যালেষ্টাইন) একটি সুনির্দিষ্ট ইতিহাস সৃষ্টিকারী ব্যবহার পদ্ধতিতে (গণ-অত্যাচার যার তুলনা নেই)। সুতরাং সমীকরণ করা হলে তা দাঁড়ায়-
বনি ইসরাঈল একত্রিকরণ ∞ ইয়াজুজ-মা’জুজের দুনিয়া জোড়া নিয়ন্ত্রণ।
অর্থাৎ ইয়াজুজ-মা’জুজ = দুনিয়ার শীর্ষতম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে যারা (রাষ্ট্র, জাতি, সম্প্রদায়, ব্যক্তি)
প্রচলিত তফসীরসমূহের কতকে ইয়াজুজ-মা’জুজ সম্পর্কে এমনও ধারণা দেয়া হয়েছে যে উঁচু উঁচু পাহাড় হতে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে আসবে একটি বিশেষ জীব যার লক্ষ্যবস্তু হবে মুসলমান। তারা এসে একসঙ্গে পৃথিবীর সমস্ত পানি চুষে খেয়ে ফেলবে। কোরআন এমন সব ব্যাখ্যায় কোন দায়িত্ব বহন করে না।
ইয়াজুজ-মা’জুজ সম্পর্কে সহীহ মুসলিমে পরিষ্কার ধারণা দেয়া হয়েছে যে- ইয়াজুজ-মা’জুজ বনি আদম বৈ কিছুই নয়। মূলত এরা কোন জীব নয়- ওরা মানুষেরই সম্প্রদায় একটি বিশেষ জাতি - বিশেষ প্রক্রিয়ায় সুচিহ্ণিত। আমরা ইয়াজুজ-মা’জুজ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো। এ পর্যায়ে শুধু একটি বিষয়ে আমরা পরিষ্কার হতে চাই যে কোরআনে উল্লিখিত আয়াত দু’টিতে আমাদেরকে একটি সুষ্পষ্ট তথ্য দেয় সময়ের বিষয়ে- এই সময়টির মাপকাঠি হলো ‘ক্বারিয়াত-এ’ বনি ইসরাঈলের একত্রিত হওয়ার সময়টি। সেই সময়ে পৃথিবীর বুকে একটি উপসর্গ প্রাধান্যসহ কাজ করবে। এই উপসর্গটির নাম হলো ইয়াজুজ-মা’জুজ। অর্থাৎ যখন ২০০০ বছর পর ইহুদীরা একটি রাষ্ট্রের পত্তন করেছে- সে সময়টিতে পৃথিবী ইয়াজুজ-মা’জুজের নিয়ন্ত্রেণে নিক্ষিপ্ত হয়েছে।
অর্থাৎ নভেম্বর ১৯৪৭ সনের পর হতে (Balfour Declaration) পৃথিবী ক্রমাগতই ইয়াজুজ-মা’জুজের নিয়ন্ত্রণের জালে আবদ্ধ হয়ে যায়। যারা ইহুদী জাতি সত্তাকে প্যালেষ্টাইনের ভূখণ্ডে প্রবেশ করিয়েছে তারা হলো ইংরেজ জাতি (যার মূলে ইউরোপিয়ান ইহুদী) এবং যারা এই জাতির অস্তিত্বকে ক্রমাগত শক্তিশালী করে তুলেছে তারা হলো আমেরিকা। অতএব গ্রেট ব্রিটেন ও আমেরিকার সাথে সংশ্লিষ্ট জাতিসত্তাই হবে কোরআনের উপসর্গ অনুযায়ী ইয়াজুজ-মা’জুজ। যেহেতু (২১:৯৬) আয়াতে ইয়াজুজ-মা’জুজের শক্তির প্রবাহ পৃথিবীর সমস্ত শীর্ষস্থানসমূহ হতে প্রবাহিত হবার প্রস্তাব এসেছে। হাত্তা ইয়া ফুতিহাত ইয়াজুজ ওয়া মা’জুজ ওয়াহুম মীন কুল্লি হাদাবিন ইয়ানসিলূন” (২১:৯৬) তখন ইয়াজুজ-মা’জুজ যুগের সূচনা ঘটবে এবং তারা শক্তির প্রবাহ পাত ঘটাবে পৃথিবীর ক্ষমতা শীর্ষ বিন্দুসমূহ হতে। আর এ শর্তটি পূরণ করবে বনি ইসরাঈলের সেই ক্বারিয়াত-এ প্রত্যাবর্তনের কিংবা প্রতিষ্ঠিত করা দ্বারা। আর মুসলমানদের ভূমিকা হবে- স্বয়ং আল্লাহপাক ক্বারিয়াতের অত্যাচার প্রতিহত করার জন্য মুসলমানদের ৪:৭৫ আয়াতে সুস্পষ্ট সনাক্তকরণ নিদর্শন/নির্দেশনা? দিয়ে দেয়া সত্ত্বেও দুনিয়ার মুসলমান জাতি এই অত্যাচারের প্রশ্নে থাকবে অনভিপেক্ষ ও নীরব। [ তার সাথে জায়নবাদীরা পৃথিবীর শীর্ষ শক্তি বিন্দুগুলো নিয়ন্ত্রণ করে, সেই শক্তি প্রয়োগ দ্বারা অন্যায়ভাবে ইসরাঈলকে প্রতিষ্ঠিত করবে এমন একটি সময় যখন সেই ‘আরদুল মুকাদ্দাস’ পরিণত হয়েছে নরক অগ্নি বা ফি ই ফা-তে। এ সময়ের অপর বৈশিষ্ট্য হলো যে- পৃথিবী শান্তি হারিয়েছে। কারণ পবিত্র ভূমি এখন ফি-ই-ফা। আর এই পবিত্র ভূমি সকলকালে পৃথিবীর শান্তির মানদণ্ড- তাতে শান্তি থাকলে, বিশ্বে থাকবে শান্তি, তাতে অশান্তি বিরাজ করলে বিশ্ব ডুবে যাবে অশান্তিতে। আল্লাহপাক যাকে পবিত্র ভূমি ঘোষণা করেছেন- সহস্র সহস্র নবীকুলের পদধূলিতে ধন্য, সে ভূমিই ইসলামের সূতিকাগার। আজ সে ঐতিহ্যের মাটিতে জ্বলছে আগুন - এখন সে ফি-ই-ফা ] বলা বাহুল্য যে বৃটিশ সাম্রাজ্যের সর্বময় শক্তি দ্বারা ইসরাইলকে প্রতিষ্ঠা দান করার পর আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এখন প্রবল শক্তি প্রয়োগের দ্বারা কেবল ইসরাঈলের প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তার প্রশ্নে জায়নবাদীদের ইচ্ছায় পূজা করে যাচ্ছে। ২১:৯৫ আয়াতের সঙ্গে ২১:৯৬ আয়াত অতিশয় সুদৃঢ়ভাবে সম্পর্কিত। মূলত আয়াত ৯৬ পূর্ববর্তী ৯৫ নম্বর আয়াতেরই ক্রমবিকাশ বা ফলোআপ। সাধারণ যুক্তিযুক্ত কারণেই অনুমেয় যে বনি ইসরাঈলদের ক্বারিয়াত নিষিদ্ধকরণ (২১:৯৫) ও পরে তা বনি ইসরাঈলদের প্রত্যাবর্তনের জন্য উন্মুক্ত হওয়া (২১:৯৬) - এ দুটি ঘটনার সাথে কোন অতিপ্রাকৃতিক জীবের উচ্চ পাহাড় হতে লাফালাফির প্রয়োজন নেই। আমরা যা দেখেছি- ক্বারিয়াত ২০০০ বছর বনি ইসরাঈলদের জন্য নিষিদ্ধ ছিল এবং সে ক্বারিয়াতে আবার তাদের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। কোরআন যা বলেছে তা হলো- এ ক্বারিয়াতে প্রত্যাবর্তনকে যারা সম্ভব করে তুলবে তারা হলো ইয়াজুজ-মা’জুজ। (জায়নবাদী ইহুদী ও জায়নবাদী খৃষ্টান)।
তাদের প্রকৃতি সম্বন্ধে যা বলেছিলাম, তা হবে - তারা উচ্চতর অবস্থানে অধিষ্টিত থাকবে। “ওয়াহুম মীনকুল্লী হাদাবিই ইয়ানসিলূন” - এবং তারা সমস্ত উচ্চতর অবস্থান হতে উৎসারিত হবে। কী উৎসারিত হবে? ইয়াজুজ-মা’জুজের ‘ফুতিহাত’ কিংবা ইয়াজুজ-মা’জুজের প্রকাশ ও প্রভাব। পৃথিবীতে এই দৃশ্যটি এখন খুব সুস্পষ্ট। যারা বনি ইসরাঈলকে একত্র করেছে, সাহায্য করেছে, প্রতিরক্ষা প্রদান করেছে, তাদের প্রভাব সমস্ত উচ্চতর অবস্থান হতে উৎসারিত হচ্ছে- এ বিষয়টি বর্তমানে আমেরিকা ও গ্রেট ব্রিটেনের দিকে তাকালে আয়নার প্রতিফলনের মত দেখা যায়। অতএব উঁচু পাহাড় হতে লাফিয়ে লাফিয়ে নেমে আসা ইয়াজুজ-মা’জুজের দৃশ্য একটি কাল্পনিক চিত্র মাত্র। এর দায় কোরআন বহন করে না। পক্ষান্তরে পৃথিবীতে অর্থনৈতিক প্রভুত্বে, ক্ষমতায়, বিজ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, নিয়ন্ত্রণে ইত্যাদির সর্বত্র শীর্ষ বিন্দুগুলোকে তারাই নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছে যারা ইসরাঈলের ত্রাণকর্তা। তারাই ইয়াজুজ-মা’জুজ। একের সহযোগী অন্যজন।
হাদীছ বলেছে- তাদের সাথে থাকবে সাহায্যকারী- ‘আহলে ইয়াজুজ-মা’জুজ’। দুনিয়ার অপরাপর জাতিদের সমাবেশ। “কোয়ালিশন অব্ উইলিং” এবং “কোয়ালিশন ফোর্স”। এইসব ইসলাম বিধ্বংসী নেশামত্ত কোয়ালিশন সমূহের হাতকে বলিষ্ঠ করে যারা, তাদের সুবিশাল অংশ মুসলমান। সুনিশ্চিত আহলে ইয়াজুজ-মা’জুজের পরিবারভূক্ত আল্লাহ বিদ্রোহী ও নবী (সাঃ)-এর সম্পর্কে বিচ্ছিন্নকারী ধর্মে মুসলিম নামীয় প্রকাশ্যে শয়তান অনুসারী কুফ্‌ফার- "কাইফা ইয়াহদিল্লাহু ক্বাওমান কাফারু বা’দা ঈমানিহিম” - এ জাতি (মুসলমান) নিয়ে আল্লাহপাকের এই তো সুস্পষ্ট অভিযোগ! “উলাইকা জাজা’উহুম আন্না আলাইহিম লা নাতাল্লাহি, ওয়াল মালাইকাতি, ওয়ান্নাসি আজমাঈন- (৩:৮৭)। এরা তো এমন মুসলমান যাদের প্রতি অবধারিত আল্লাহর লা’নত, ফেরেশতাদের লা’নত এবং লা’নত মানবজাতির।

** প্রচলিত সমস্ত তরজমা ও তাফসীরে ‘ফি-ইফা’- কে mingled crowd বা মিশ্রিত জাতিসত্তা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি একটি বৈধ ও উপযুক্ত তরজমা বটে। ইসরাঈল এখন এমন বড় রকমের সংকর জাতিসত্তা যার মৌলিকতার প্রশ্নে তারা সদা গর্বস্ফীত। এর সত্যাসত্য কতটুকু মৌলিক তা আমরা খুব সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই আজকের ইসরাঈলে।

1 comment:

Theme images by piskunov. Powered by Blogger.