এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যা বিবেচনায় রাখতে হবে

‘
ডেঙ্গু জ্বর’ শব্দটি আজ আমাদের জীবনে একটি আতঙ্কের সমার্থক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। এডিস মশার কামড়ে হওয়া এই জ্বর মহামারি আকারে আজ জনজীবনে ছড়িয়ে পড়েছে। বিগত এক দশকে এই মশার এমন বিস্তার ঘটেছে যে প্রায় বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা এই রোগের বিপৎসীমায় রয়েছে। একটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী এডিস মশা একবারে প্রায় ১০০টি ডিম পাড়ে এবং পূর্ণ জীবদ্দশায় পাঁচবার ডিম পাড়তে পারে। সুতরাং এর বিস্তারের মাত্রা যে কত ভয়াবহ, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন প্রথম এই মশার অস্তিত্ব আমাদের দেশে পরিলক্ষিত হয়, তখন ঢাকা সিটি করপোরেশন খুব স্বল্প পরিসরে কিছু প্রকল্প হাতে নেয়। তখন কর্তৃপক্ষ এর ভয়াবহতা সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করতে পারেনি। তাই পরবর্তী সময়ে সাময়িকভাবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছে। মানে যখন এই মশার উৎপাত বেড়েছে, তখনই শুধু এই মশা দমনের চেষ্টা করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অদক্ষ জনবল দিয়ে কীটনাশক স্প্রে করা, ফগার মেশিন প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করা। যাঁরা এসব কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, তাঁদের নেই কোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রশিক্ষণ, নেই কোনো মশার ওপর জ্ঞান। তাঁরা সঠিকভাবে জানেন না কোথায় কোন প্রজাতির মশা রয়েছে। যেমন এডিস না কিউলেক্স প্রভৃতি, নির্দিষ্ট স্থানে লার্ভার ঘনত্ব কী রকম, কোন মশার জন্য কী ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় আর কীটনাশক প্রয়োগের মাত্রার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা কতটুকু। সে কারণে তাঁরা নিজ ইচ্ছেমতো অত্যুৎসাহী হয়ে কীটনাশকের মাত্রা বাড়িয়ে মশা দমনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগের ফল বিপরীত হতে পারে। কারণ, মশারা অতিরিক্ত প্রতিকূল পরিবেশ থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্য পি-৪৫০ জিনকে ব্যবহার করে নিজের শরীরতত্ত্বীয় (ফিজিওলজিক্যাল অ্যাডজাস্টমেন্ট) পরিবর্তন এনে প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তখন আর আগের ব্যবহৃত কীটনাশক দিয়ে মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয় না। সাম্প্রতিক কালে আইসিডিডিআরবি এডিস ও কিউলেক্স মশার ডিম সংগ্রহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখেছে যে ঢাকায় বিগত ১০ বছরে যেসব কীটনাশক মশা দমনে ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে মশারা প্রতিরোধক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে। যার অর্থ এই দাঁড়ায়, এসব প্রচলিত কীটনাশক দিয়ে আর ওই মশা দমন করা সম্ভব নয়।
No comments